Monday 13 April 2015

HOK KOLOROB : New Form of Student Movement, desired or undesired ?

অধ্যাপক সুগত মারজিৎ  , কিছুদিন আগে ৪-১১-২০১৪   তারিখে  আনন্দবাজার পত্রিকায় “ছাত্র আন্দোলন বিষয়ে কিছু অপ্রিয় সত্য” কথা বলেছেন । শুধু তাঁর কথা নয়  , তিনি প্রসঙ্গক্রমে  অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তীর লেখা ‘এই সমস্যা ----‘ (৩০-০৯-২০১৪ তারিখে প্রকাশিত )  বিষয়ে কোন কোন পাঠকের করা  সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন । পরোক্ষে অধ্যাপক চক্রবর্তীর পক্ষ সমর্থনে দু- চার কথা বলেছেনও । প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ , শিক্ষক ,এবং উচ্চ- শিক্ষার অন্যতম প্রশাসক হিসাবে , অধ্যাপক মারজিৎ ,  ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধীতা না করেও , এই ধরণের আন্দোলনে যুক্ত , বা যুক্ত হতে ইচ্ছুক ছাত্র- ছাত্রীদের ,  ব্যাক্তিগত লাভ- ক্ষতির  হিসাব  করে , আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরামর্শও  দিয়েছেন ।

চাকরী সূত্রে বিভিন্ন প্রয়োজনে অধ্যাপক মারজিৎ -এর কাছাকাছি আসার এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গী  জানার সুযোগ আমার হয়েছে । সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমানের অভিজ্ঞতার খুব একটা গরমিল আছে বলে মনে হয় না । মাস্টারমশাই এবং শিক্ষণ- ব্যবস্থার প্রসাশক হিসাবে , তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ‘ব্যক্তি’ ছাত্রকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন , তাদের স্বপ্নপুরী   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই শুধু নয় এখানকার ঝাঁ চকচকে  বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে , যাদবপুরের মত কৌম- দীপ্ত প্রতিবাদ ,প্রবল নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে না ।এবং তা পারে না কেবলমাত্র ব্যক্তি অনীহার কারণে ।সেখানে কয়েক হাজার টাকা মাসে টিউশন ফি বাবদ দিতে হয় । তাই লাভ ক্ষতির ব্যাল্যান্স সীট ,  ছাত্র-ছাত্রীর পঠন-পাঠন ও শিক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে , তদের সবসময় শাসন করে চলে । ছাত্র জীবনের দর্শনকে সূচীমুখ করে তোলে ঃ-   “টাকা দাও ভর্তি হও , কোর্সের নির্ধারিত সময়টা অতিবাহিত কর । তারপর শংসা পত্র নিয়ে “বাজারে” নেমে পর” ।  মূল দর্শন হল , নিজেকে পণ্য হিসাবে সাজিয়ে বিক্রয় যোগ্য করে তোলা । অস্বীকার করার উপায় নেই , যে , আমাদের সকলের অন্তিম লক্ষ্য সেটা হলেও , কখনই সেটা দর্শন হতে পারে না । একটি যুবক বা যুবতী তাদের ছাত্র জীবনে একক ও সর্ব বিচ্ছিন্ন স্বাতন্ত্র্যকে সামনে রেখে নিজেকে লক্ষাধীক  মূল্যের  পণ্য হিসাবে গড়ে তুলবে , তার আর কোন দর্শন থাকবে না , এটাই কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র দর্শন ? আমরা কি এটাই আমাদের ছাত্রছাত্রীকে শেখাব , যে তারা যেন, অপরচুনিটির সর্বাধিক সদ্ব্যবহার করে, শিক্ষার  কস্ট- এর  যথার্থতা প্রতিষ্ঠা করে ।  কারণ , সেটাই একমাত্র সফলতার কাঙ্ক্ষিত পথ । অধ্যাপক মারজিৎ  কি তাঁর ছাত্র জীবনে এ-ভাবেই ভাবতেন ?

শিক্ষণ- ব্যবস্থার প্রশাসক হিসাবে সরকারী সাহায্য পুষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের আধিক্যকে তিনি এভাবেই কস্ট- ভিত্তিতে  সরলীকরণ করেছেন । তাঁর ব্যাখ্যা দেখে মনে হয়েছে  পড়ার কস্ট যত কম হবে , অপরচুনিটির প্রাপ্তব্যতা  ততই কম হবে । আর তাই হয়ত এই সব ক্ষেত্রে ,  তিনি অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তীর  খুব সাধারন প্রকল্পিত বক্তব্য , “পরে দেখে নেব” –কে যুক্তিসঙ্গত বলতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা বা বিলম্ব করেন নি । অধ্যাপক মারজিৎ  টিউশন ফি-র সাথে অপরচুনিটি কস্ট-কে একই সরলরেখায় রেখে উদার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যমূখী  বিশ্বায়নের সত্যকেই , প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছেন । তাই অধ্যাপক মারজিৎ -এর অপ্রিয় সত্যকে আমরা যত দ্রুত প্রিয় সত্য হিসাবে মেনে নিতে পারব , তত দ্রুত যাদবপুরের কৌম- দীপ্ত  আন্দোলনকে আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারব । তার অন্তিম দিন ঘোষণা করতে পারব ।

কথাটা মানতে অসুবিধা ছিল না । কিন্তু প্রশ্ন হল ,সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কলেজের অভ্যন্তরের ( কলেজের নাম লিখতে গেলে লেখার আয়তন বেড়ে যাওয়ার ভয় আছে ) বহিরাগতদের শিক্ষণ পুষ্ট  “ছাত্র- বিক্ষোভ- আন্দোলন” (এই শব্দ-বন্ধটি সংবাদপত্র থেকে ধার করা ) , অথবা প্রেসিডেন্সীর ‘গেট- ভাঙ্গা’ “ছাত্র- বিক্ষোভ- আন্দোলন”-এর  ‘অপরচুনিটি  কস্ট’ অধ্যাপক মারজিৎ  কিভাবে করবেন ? অথবা কলকাতা বিশ্বাবিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায়  বিক্ষুব্দধ ছাত্র- নেতার দলবল সহ পাণ্ডা গিরি  করার জন্য প্রবেশ এবং শিক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের অপরচুনিটি নেওয়ার চেষ্টাকে অধ্যাপক মারজিৎ  কি তাঁর “অপ্রিয় সত্য” কথনের সাথে যুক্ত করবেন ?

মনে হয় , যাদবপুরের ছাত্র- ছাত্রীর কৌমতা “ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মুখী  বিশ্বায়নের” পরিপ্রেক্ষিতে যতটা অপ্রিয় , ছাত্র- বিক্ষোভ- আন্দোলন , বা , বহিরাগতদের আনুকূল্যে ছাত্র সংগঠনের ভাঙচুর , সরকার পোষিত সম্পত্তির ছত্রখান , ততটা অপ্রিয় ত’ নয়ই , বরং হয়ত প্রিয় । কারণ এই ভাঙচুর “হয়ত” ক্যাপিটালের রি- সাইক্লিং অপরচুনিটি সৃষ্টির সহায়ক , তাই এটা অতটা অপ্রিয় নয় !

যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনের সুত্রপাত যে বিষয় নিয়ে হয়েছিল , শুনেছি , (প্রথমে অধ্যাপক চক্রবর্তীর লেখায় , পরে অন্য একটি পত্রিকায় অধ্যাপক অনুষ্টুপ বসুর লেখায় ) বিদেশে না’ কি’ সে রকম বিষয়গুলি আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির   দৌত্যতায় , শুধু মাত্র আর্থিক ক্ষতিপূরণের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগতস্তরে  মিটিয়ে ফেলা হয় । যৌথ প্রতিবাদের ভাষা সৃষ্টির কোন অবকাশ দেওয়া হয় না । “গণতান্ত্রিক বাতাবরণে অর্থকে বিনিময়ের মাধ্যম করে” পণ্যের আদানপ্রদান হয় । সমাজের বৌদ্ধিক ট্র্যাডিশনকে জাগ্রত না করে , ব্যক্তিকেন্দ্রিক “স্বার্থ পুষ্টি ও  ভালমন্দের মূল্যভিত্তিক বিবেচনা” সর্বোপরি ক্ষয়ক্ষতির লাভ লোকসানের হিসাব কষে নেওয়া হয় । অধ্যাপক মারজিৎ  , এই দিকটাও ভেবে দেখতে বলেছেন । কারন তিনি মনে করেন , প্রথমত , আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আদর্শ  ও মুল্যবোধকে ছাত্র- কৌম ভুক্ত করা অপেক্ষা, ব্যক্তি স্বার্থ পূরণের অপরচুনিটির সন্ধান করা অনেকবেশী শ্রেয় । তারপর না হয়  দ্বিতীয় পর্যায়ে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দরদাম  ঠিক করে ,এই বাঙলার বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীর হালফিল ফেলে রাখা পাদুকায় পা গলিয়ে , আন্দোলনে অংশ নেওয়া যাবে । তাতে মনে হয়,  আন্দোলন উত্তর কালে কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে যায় । অধ্যাপক মারজিৎ-এর  বিশ্বাস , এভাবেই আপাতত লক্ষের প্রতি সূচিমুখ আন্দোলনের রাশ টেনে ধরা যাবে , এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করা  যাবে ।

ধন্যবাদ , অধ্যাপক সুগত মারজিৎকে , ছাত্রছাত্রী এবং সমাজের অন্যান্য কৌম অংশকে এইরূপ “অপ্রিয় সত্য” কথা বলার জন্য ।

No comments:

Post a Comment